মোগরাপাড়া বাজারের পশ্চিমদিকে দরগাবাড়ির প্রবেশদ্বারের একটি ভগ্নপ্রায় প্রাচীন ইমারত নহবতখানা । এটিকে প্রাসাদের প্রবেশদ্বার নহবতখানা বলা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, নহবতখানায় বাদ্যযন্ত্র সহকারে সকাল-সন্ধ্যায় মুসাফিরদের নিকস্থ আশ্রয়ের সন্ধান দেয়া হতো বলে অধ্যাপক এএইচ দানী উল্লেখ করেছেন।
সোনারগাঁয়ের সোনালি যুগে মোগরাপাড়া দরগাবাড়ি কমপ্লেক্সের সুরম্য অট্টালিকার প্রবেশ পথে নহবতখানা নির্মাণ করা হয়। নহবতখানাটি এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধারণা করা হয়, এটি সুলতানি আমলের পাতলা জাফরি ইটের তৈরি সুরক্ষিত স্থাপনা। নহবতখানাটি নজরকাড়ার মতো একটি দৃষ্টিনন্দন ইমারত। হয়তো এ নহবতখানাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল এক ধরনের বাদ্যকর শ্রেণি। নহবতখানায় রাজা, মহারাজা, আমির ওমরাসহ প্রজাসাধারণ মুখরিত হতো সানাইয়ের মূর্ছনায়। মোগরাপাড়া দরগাবাড়ির জৌলুস বিলুপ্তির পর আলোচিত নহবতখানাটি সংস্কারের অভাবে বিলীয়মান। নতুন প্রজন্মের কাছে সোনারগাঁও অঞ্চলের প্রাচীন স্থাপত্য সভ্যতা তুলে ধরার প্রয়াসেই বিনোদনের অনন্য নিদর্শন নহবতখানা নিয়ে আলোকপাত।
মুসলিম শাসনামলে রাজপুরুষদের প্রাসাদের সম্মুখে নহবতখানা থাকতো। যেখানে প্রত্যুষে বাদ্যযন্ত্র বাজাবার রেওয়াজ ছিল । সরেজমিন দেখা যায়, নহবতখানার বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে একটি গেইট নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত প্রত্যেহ সকাল-সন্ধ্যায় রাজা বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরদ্বারে বাদ্যধ্বনি করার জন্য বিশেষ স্থাপতশৈলীতে নওবতখানা নির্মাণ করা হতো।
মুঘল স্থাপত্যশিল্পে নহবতখানার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মোগরাপাড়ার নহবতখানা আমাদেরকে সোনালি অতীতের সুবর্ণ অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সোনারগাঁও অঞ্চল সভ্যতার আবহে সমৃদ্ধ পর্যটন ভুবনে গড়ে উঠুক সেটিই প্রত্যাশা। ঐতিহাসিক সোনারগাঁও বাঙালির গর্ব। এই গর্বকে ঐতিহাসিক ভাবে ধরে রাখার প্রচেষ্টা সবার জাতীয় ও নৈতিক দায়িত্ব বলে আমার প্রতীতি।
© এ কে এম মুজ্জাম্মিল হক মাসুদ
সোনারগাঁও ভ্রমণ গাইড
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়